দেশের সেচ প্রকল্পের মধ্যে অন্যতম ‘চাঁদপুর সেচ প্রকল্প’। দীর্ঘ ৪৫ বছর এ প্রকল্পের পাম্প মেশিনগুলো প্রতিস্থাপন না করা, খালগুলোতে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা ও পানি প্রবাহ কমে যাওয়ায় চলতি বোরো মৌসুমে নির্দিষ্ট সময়ে সেচ কার্যক্রম শুরু হয়নি। জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে জমিতে পানি দেয়ার কথা থাকলেও একমাসের অধিক সময় পার হয়ে যায়। যার ফলে ধান রোপন করতে না পেরে হতাশায় এবং কান্নায় ভেঙে পড়েন হাজার হাজার কৃষক। শেষ মুহুর্তে পানি উন্নয়নবোর্ড, স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের হস্তক্ষেপে চলতি সপ্তাহে জমিগুলোতে পানি আসতে শুরু করেছে। বর্তমানে ধান রোপনের কাজে ব্যস্ত কৃষক।
চাঁদপুর সেচ প্রকল্পে বোরো মৌসুমে ১ জানুয়ারি থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত ৪ মাস পানির সবচাইতে বেশী প্রয়োজন হয়। কিন্তু প্রকল্পের চরবাগাদী পাম্প হাউজের ৬টি পাম্প মেশিনের মধ্যে দুটি নষ্ট। ৪টি পাম্পও কার্যক্ষমতা কমে যাওয়ায় ২৪ঘন্টা পরিচালনা করা সম্ভব হয়নি। যার ফলে সেচ কাজ কিছুটা ব্যহত হয়েছে বলে জানান পানি উন্নয়ন বোর্ডের যান্ত্রিক বিভাগ।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, সেচ প্রকল্পের ৫৩ হাজার হেক্টর চাষযোগ্য জমিতে মৌসুমের শুরুতে সেচ কার্যক্রম ব্যহত হয়ে পড়ে ফরিদগঞ্জ, সদর ও হাইমচর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে। কৃষকদের সেচ সমস্যার বিষয়টি নজরে আসলে সদর উপজেলার বাগাদী ইউনিয়নে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান খালগুলোর প্রতিবন্ধকতা দুর করেন। হাইমচর উপজেলায় খালগুলো পরিস্কার করার ব্যবস্থা করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। এছাড়া ফরিদগঞ্জ উপজেলায় বেশ কয়েকটি ইউনিয়নের খালে পানি না থাকায় জমিগুলো ফেটে যেতে থাকে। ফসল না লাগানোর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়।
চাঁদপুর সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা সানজিদা শাহনাজ জানান, কৃষকদের পানির সমস্যার কথা শুনে আমরা তাৎক্ষনিক খালগুলোর প্রতিবন্ধকতা অফসারণ করি। এতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সহযোগিতা করেন। ফসল উৎপাদনের সহযোগিতায় আমরা কৃষকের পাশে আছি।
সবচাইতে বেশি সেচ সংকট দেখা দেয় ফরিদগঞ্জ উপজেলার ৭নম্বর পাইকপাড়া উত্তর ও দক্ষিণ ইউনিয়নে। এই এলাকার জমিগুলো পানি না থাকায় ফেটে যায়। বয়স বেশী হওয়ায় লাল হয়ে যায় বীজতলা। সরেজমিন ওই এলাকায় গিয়ে সতত্যা মিলে। কৃষকরা জানান তাদের অসহায়ত্বের কথা।
পাইকপাড়া উত্তর ইউনিয়নের মদনপুরা মাঠের কৃষক কাদের জানান, পানি না পেয়ে আমরা হতাশ হয়ে পড়ি। এবার ধান লাগাতে পারব এমন আশা ছেড়ে দিয়েছি। তবে শেষ মুহুর্তে আমাদের একরাম মেম্বার ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের ইঞ্জিনিয়ার মো. জাহাঙ্গীর দিন ও রাতে কাজ করে খালের প্রতিবন্ধকতা দুর করায় শেষ মুহুর্তে পানি পেয়েছি।
একই এলাকার আরেক কৃষক সাইফুল ইসলাম জানান, মৌসুম ছাড়া স্থানীয় লোকজন খালের মধ্যে বাঁধ দিয়ে মাছ ধরে এবং ব্রিজ করার সময় খালে বাঁধ দেয়। এসব বাঁধের কারণে পানি আসে না। আবার পলিমাটি পড়েও খাল ভরাট হচ্ছে। এখন খাল খনন করাও জরুরি হয়ে পড়েছে।
পাশবর্তী ভাওয়াল মাঠের একাধিক কৃষক জানালেন, খালের মধ্যে প্রতিবন্ধকতা দূর করতে আগ থেকেই ব্যবস্থা নিতে হবে। মৌসুমের ঠিক শেষ মুহুর্তে পানি পেয়েছি। ফসল কেমন হবে সেটা আল্লাহর উপরই নির্ভর করে।
পাইকপাড়া উত্তর ইউনিয়নের ইউপি সদস্য রায়হান কবির ও মাজহারুল ইসলাম আকরাম জানান, ডাকাতিয়া নদীর গাজীপুর থেকে শুরু করে আমাদের এলাকা পর্যন্ত খালে বহু বাঁধছিল। আমরা পানি উন্নয়ন বোর্ড ও প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ করে বহু কষ্ট করে পানির ব্যবস্থা করেছি। কৃষকরা এবার ফসল করতে পারবে না আশা ছেড়ে দেয়। শেষ মুহুর্তে চলনবিল, ভাওয়াল, তামর শাসন, চমুখা, ইছাপুরা, আদশা, খাজুরিয়া ও দক্ষিণ কাওনিয়া মাঠে পানি পেয়ে কৃষকদের অনেকটা হতাশা কেটেছে।
চাঁদপুর পাইকপাড়া উত্তর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবু তাহের পাটওয়ারী বলেন, কৃষকদের পানি সংকট আমার ইউনিয়নে প্রথমে দেখা দেয়। দেরিতে হলেও রোপন কাজ শুরু হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্মকর্তা ও প্রশাসনের প্রতি কৃতজ্ঞতা।
পানি উন্নয়ন বোর্ড চাঁদপুর এর উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, চাঁদপুর সেচ প্রকল্পের ইরিগেশন প্রকেল্পর খালগুলোতে কিছু বাঁধ থাকায় কৃষক পানি পেতে সমস্যা হচ্ছিল। আমাদের দৃষ্টিগোচর হওয়ার সাথে সাথেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছি। এখন সবাই ধান রোপন করছে, পানির কোন সমস্যা নেই।